ইট তৈরির জন্য কয়লা ভাঙার কাজে ব্যস্ত রওশন আরা। রাজধানীর আমিন বাজার এলাকায় | ফাইল ছবি |
মো. আব্দুল্লাহ আল হোসাইন: কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) ঢাকা কার্যালয়ে শ্রমিক ও কর্মীরা যত অভিযোগ করেন, তার বেশির ভাগই বেতন-মজুরি না পাওয়া এবং ছাঁটাইয়ের পর পাওনা না দেওয়া সংক্রান্ত।
২০২১ সাল ও চলতি বছরের জানুয়ারি মাস মিলিয়ে ১৩ মাসে ৮০২ জন শ্রমিক-কর্মী ডিআইএফইর ঢাকা কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর ৯১ শতাংশ অভিযোগই মজুরি ও পাওনা না দেওয়া নিয়ে।
শুধু ঢাকা কার্যালয় নয়, সারা দেশেই কলকারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নানা বিষয়ে ডিআইএফইর কাছে অভিযোগ করেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের কাছে সারা দেশ থেকে ৫ হাজার ২৩৬টি অভিযোগ জমা পড়ে। তবে কী বিষয়ে কত অভিযোগ, তা জানাতে পারেনি সংস্থাটি। কর্মকর্তারা বলেছেন, সারা দেশেও মজুরি নিয়েই অভিযোগ বেশি।
আজ পয়লা মে, মহান মে দিবস। শ্রমিকের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটার স্বপ্ন দেখার দিন এটি। এ দিন সামনে রেখে শ্রমিক ও শ্রমিকনেতারা বলছেন, ডিআইএফইতে অভিযোগ যতটা জমা পড়ে, সমস্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। সাধারণত শ্রমিক বা কর্মীরা চাকরি হারানোর পরই কেবল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। হয়রানির ভয়ে চাকরিরত অবস্থায় কেউ অনিয়মের শিকার হলেও অভিযোগ করেন না।
ঢাকা কার্যালয়ে যে ৮০২টি অভিযোগ জমা পড়েছে তার মধ্যে ৩৬২টি মজুরি, ৩৭০টি বকেয়া মজুরি ও পাওনা, ২০টি ছুটি ও মাতৃত্বকালীন ছুটি না দেওয়া, ১৯টি ওভারটাইম বা অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়ে মজুরি না দেওয়া, ৯টি ছাঁটাই, ৭টি নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য, ২টি শারীরিক নির্যাতন ও ১৩টি অন্যান্য বিষয়ে।
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান বলেন, রপ্তানিমুখী বড় কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলনামূলক কম। তবে ছোট-মাঝারি কারখানা ও যেসব কারখানা বড় কারখানার কাছ থেকে ঠিকা নিয়ে কাজ করে, সেসব কারখানায় মজুরি ও পাওনা নিয়ে অভিযোগ বেশি। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নারী শ্রমিকেরা সন্তানসম্ভবা হলে তাঁদের আর্থিক সুবিধা ও মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ সন্তানসম্ভবা শ্রমিকদের ছাঁটাই করতে ফাঁকফোকর খোঁজে। শ্রমিক ইউনিয়ন করতে গেলেও চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটে।
শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিককে মাস শেষ হওয়ার পর সাত কর্মদিবসের মধ্যে মজুরি দিতে হয়। ছাঁটাই করা হলে শ্রম আইন অনুযায়ী বিভিন্ন পাওনা দিতে হয়।
ডিআইএফইর ঢাকা অঞ্চলের উপমহাপরিদর্শক এ কে এম সালাউদ্দিন বলেন, ঢাকা জেলায় পোশাক কারখানা থেকে মূলত অভিযোগ বেশি আসে। তবে রপ্তানিমুখী নয়, অভিযোগ সংখ্যা বেশি দেশীয় বাজারমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। অনেক সময় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তৃতীয় পক্ষের কোনো কারখানা থেকে পণ্য তৈরি করিয়ে নেয়। ঠিকায় কাজ করা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি অভিযোগ আসে। তিনি বলেন, পোশাক কারখানার বাইরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিযোগ আসা শুরু হয়েছে।
ডিআইএফইতে অভিযোগকারীদের একজন পিপুল হোসেন ফেরদৌস। তিনি একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ মেডিকেল প্রমোশন অফিসার ছিলেন। ১০ বছর চাকরি করার পর প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে ছাঁটাই করে। পিপুল বলেন, গত নভেম্বরে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি কর্তৃপক্ষকে বলেন, প্রয়োজনে তাঁকে যেন বরখাস্ত করা হয়।
পিপুল জানান, পরে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু পাওনা দেওয়া হয়নি। তিনি এ নিয়ে ডিআইএফইতে অভিযোগ করে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা পাওনা পান।
শ্রমিক ও কর্মীরা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে চিঠি দিয়ে, ই-মেইল করে অথবা ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারেন। শ্রমিক হেল্পলাইন নম্বর ১৬৩৫৭। অধিদপ্তর জানিয়েছে, তাদের কাছে জমা পড়া বেশির ভাগ অভিযোগই নিষ্পত্তি করা হয়। অধিদপ্তরে মীমাংসা না হলে শ্রমিকেরা শ্রম আদালতে যেতে পারেন।
ডিআইএফইর উপমহাপরিদর্শক এ কে এম সালাউদ্দিন বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা জানেনই না, কোথায় অভিযোগ করতে হয়।