কুয়াকাটা সৈকত থেকে আরও একটি মৃত ‘অলিভ রিডলে’ কচ্ছপ উদ্ধার

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে মৃত অলিভ রিডলে কচ্ছপ | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি বরিশাল:  পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে শুক্রবার আরও একটি মৃত ‘অলিভ রিডলে’ বা জলপাই রঙের বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এক সপ্তাহে একই প্রজাতির তিনটি মৃত কচ্ছপ পাওয়া গেল এই সৈকতে।

ওয়ার্ল্ড ফিস বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি  শুক্রবার দুপুরে কচ্ছপটির মৃতদেহ পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, এটি একটি স্ত্রী কচ্ছপ। এরই মধ্যে আমরা এটির নমুনা সংগ্রহ করেছি। এখন তা বন বিভাগের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।’

স্থানীয় জেলেরা বলেন, আজ সকালে কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম দিকে লেবুর বাগান এলাকার বালিয়াড়িতে মৃত কচ্ছপটি দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে ইকোফিশের গবেষকেরা সেখানে যান এবং নমুনা সংগ্রহ করেন। তাঁরা বলেন, এটি বিপন্ন প্রজাতির অলিভ রিডলে বা জলপাই রঙের কচ্ছপ। কচ্ছপটির ওজন অন্তত ২৫ কেজি।

এর আগে সৈকতের তেত্রিশকানি এলাকায় গত রবি ও মঙ্গলবার একই প্রজাতির আরও দুটি কচ্ছপের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ দুটি কচ্ছপের ওজন ছিল যথাক্রমে ২০ ও ২৫ কেজি। দুটি কচ্ছপের একটি পুরুষ ও অপরটি স্ত্রী ছিল।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) অলিভ রিডলে কচ্ছপকে ‘সংকটাপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

স্থানীয় জেলেরা বলেন, এখন কচ্ছপের প্রজনন মৌসুম। এই সময়ে এসব কচ্ছপ কিনারে এসে বালিয়াড়িতে ডিম পাড়ে। মূলত ডিম পাড়তে কিনারে আসার সময় জেলেদের জালে আটকে মারা পড়ে এসব কচ্ছপ। আজ যে কচ্ছপটির মৃতদেহ পাওয়া যায়, সেটির গলা ও ঘাড়ের অংশ অনেকটা থেঁতলানো।

গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, সম্ভবত জালে আটকা পড়ে এটির মৃত্যু হয়েছে। দু-এক দিন আগে কচ্ছপটি মারা যাওয়ায় সেটি এখনো অক্ষত আছে। শরীরে পচন ধরেনি।

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, সামুদ্রিক কচ্ছপ-সম্পর্কিত তথ্য পর্যালোচনায় দেখে গেছে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সাত প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অলিভ রিডলে, গ্রিন ও হক্সবিল প্রজাতির কচ্ছপ অন্যতম। তবে বেশি পাওয়া যায় অলিভ রিডলে প্রজাতির কচ্ছপ। এদের ওজন সর্বোচ্চ ৫০ কেজি হয়। এই প্রজাতির কচ্ছপ সর্বোচ্চ ৫০ বছর বেঁচে থাকে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, এ ধরনের কচ্ছপের প্রজনন সময় মূলত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর, তবে নভেম্বর সর্বোত্তম প্রজননের সময়। এরা চিংড়ি, লবস্টার, শামুক, ঝিনুক, ওয়ারম, জেলিফিশ, মাছ, মাছের ডিম, সাপ ও শৈবাল–জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। অলিভ রিডলে প্রজাতির কচ্ছপ সাগরের অগভীর অঞ্চলে বসবাস করায় সামুদ্রিক শৈবাল এদের শরীরে এঁটে যায়। তাই গায়ের রং সবুজাভ বা জলপাই হয়। কুয়াকাটায় এ নিয়ে তিনটি একই প্রজাতির মৃত কচ্ছপ পাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক।