বনানীর সামরিক কবরস্থানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। |
নিজস্ব প্রতিবেদক: পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘এ রায় যথার্থভাবে কার্যকর করা হবে। আপনারা বিচারের জন্য যেভাবে ধৈর্য ধারণ করে আসছেন, এভাবে ধৈর্য ধারণ করবেন। আপনারা এ ঘটনার বিচার দেখতে পারবেন।’
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আজ থেকে ১৩ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ হয়। বিডিআরের কয়েক শ সদস্য বিদ্রোহের পর পিলখানায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালান। নিষ্ঠুর আচরণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা।
তাঁদের অনেকের পরিবারের সদস্যরাও নৃশংসতার শিকার হন। দুই দিনব্যাপী ওই বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারে অনেক সময় লেগেছে। তারপরও আজ আমরা স্বস্তিতে নিশ্বাস নিতে পারছি। আমরা অবশেষে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পেরেছি।’
পিলখানায় এভাবে নৃশংস ও হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটবে, তা কল্পনাও করা যায়নি উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান বলেন, তখন বিডিআরের কতিপয় বিপথগামী সদস্য এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
বিচারের দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদের সবকিছু সংগ্রহ করতে একটু সময় লেগেছে। এ ছাড়া সাক্ষী জোগাড় করতেও বেশ সময় লেগেছে।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘চাচ্ছিলাম এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার যেন হয়, বিচারকেরা তাই করেছেন। আর যে মামলার বিষয়টি চলমান রয়েছে, সেটা খুব শিগগির শেষ হবে। বিচার শেষ হওয়ার পর আপিল করার একটি সুযোগ থাকে, সেটাও হয়েছে। আমরা মনে করি, এই প্রক্রিয়া শেষ হলে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে।’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে (বর্তমান বিজিবি) এক মর্মান্তিক ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একসঙ্গে দুটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালতের রায় হয়েছে। এই মামলা হাইকোর্টের রায়ের পর এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলা বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়নি।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান শ্রদ্ধা জানান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সিনিয়র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) আখতার হোসেন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম শ্রদ্ধা জানান।
পরে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
১৩ বছরেও এই হত্যার বিচার শেষ না হওয়ায় এবং যড়যন্ত্রকারীদের নাম সামনে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন মেজর মো. মমিনুল ইসলাম সরকার। তাঁর বাবা মো. মফিজুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘১৩ বছর হয়ে গেল, বিচার পেলাম না। আর কয়দিন বাঁচব জানি না। বেঁচে থাকতে বিচার দেখে যেতে চাই।’