অক্সিজেন ছাড়া কংক্রিটের তৈরি সব স্থাপনা ভেঙে পড়বে। ছবি: সংগৃহীত |
নিউজ ডেস্ক: কল্পনা করুন এই পৃথিবীতে অক্সিজেন অদৃশ্য হয়ে গেল। আজীবনের জন্য এমনটি হবে বলছি না। ধরুন মাত্র ৫ সেকেন্ডের জন্য। চিন্তামুক্ত! এ আর এমনকি, ৫ সেকেন্ডের জন্য দম বন্ধ করে রাখব। আপনি না হয় ৫ সেকেন্ডের জন্য দম বন্ধ করে রাখলেন। কিন্তু পরিবেশের ওপর এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
একটি সুন্দর গভীর শ্বাস নিন। বেঁচে আছেন? নিজেকে সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে? আপনি বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস নিতে গিয়ে যা গ্রহণ করছেন তাই অক্সিজেন। আমাদের বায়ুমণ্ডলে ২১ শতাংশ গ্যাস হলো অক্সিজেন। কিন্তু এটিই এই সবুজ গ্রহের সর্বাধিক গ্যাস নয়। এই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি গ্যাস হলো নাইট্রোজেন, যার পরিমাণ ৭৮ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি গ্যাস না হলেও আমাদের জন্য অক্সিজেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রহে অক্সিজেন না থাকলে গাছপালা, প্রাণী, মানুষ এমনকি পানিও থাকত না। আমরা যে খাওয়ার পানি খাই, পানির অপর নাম জীবন বলি, সেই পানি কিন্তু অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের মিলিত যৌগ।
অধিকাংশ মানুষই ৩০ সেকেন্ড অক্সিজেন ছাড়া থাকলে তাদের শারীরবৃত্তীয় কোনো সমস্যা হয় না। ৫ সেকেন্ড অক্সিজেন ছাড়া আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকই থাকবে। কিন্তু অন্য যেকোনো কিছুর জন্য নয়।
হোয়াটইফে প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এই ৫ সেকেন্ডে পৃথিবীর চিত্র পুরো বদলে যাবে। অক্সিজেন কংক্রিটের বাঁধাই হিসেবে কাজ করে। যদি অক্সিজেন না থাকে, তবে কংক্রিট কেবল ধুলোমাত্র। অর্থাৎ অক্সিজেন যদি উধাও হয়ে যায়, ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই পৃথিবীর সব ছোট-বড় দালানকোঠা ধসে পড়বে। রক্ষা পাবে না অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে ব্রুজ আল আরব, এমনকি ভেঙে পড়বে সেতু, ফ্লাইওভার, মেট্রো।
আপনি ভাবছেন এ সময় যদি সমুদ্রসৈকতে থাকেন। হয়তো বেঁচে যাবেন। দালানকোঠা নেই। আসলে তাতেও রক্ষা নেই। অক্সিজেন পরমাণু দ্বারা গঠিত ওজোন স্তর সূর্য থেকে আশা অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে। অক্সিজেন না থাকলে পৃথিবী অত্যন্ত গরম হয়ে উঠবে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করার মতো আর কিছুই থাকবে না।
রোদে পুড়ে গিয়েও রক্ষা নেই। এ সময় আমাদের কানও ফেটে যাবে। এই বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ ২১ শতাংশ। অর্থাৎ অক্সিজেন না থাকা মানে বায়ুমণ্ডল বায়ুচাপ হারাবে ২১ শতাংশ, যা তাৎক্ষণিকভাবে সমুদ্রের ২০০ মিটার গভীরের চাপের সমান এবং আমাদের কান মানিয়ে নেয়ার সময় পাবে না। ফলে ৫ সেকেন্ডেই আমাদের শ্রবণশক্তি হারাতে হবে।
আগুন ধরার ক্ষেত্রে অক্সিজেনের ভূমিকা আমরা জানি। বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন নেই তো আগুন নেই। যানবাহনে জ্বলন প্রক্রিয়াও ঘটবে না। বৈদ্যুতিক যানবাহন ছাড়া সব ট্রাক, গাড়ি রাস্তায় থেমে যাবে। আকাশ থেকে পাখির মতো বিমান পড়তে থাকবে।
আকাশ হয়ে যাবে সম্পূর্ণ অন্ধকার। সূর্যের আলো পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগে বায়ুমণ্ডলে একাধিক স্থানে বাউন্স হয়ে আসে। বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন না থাকলে আলো বাউন্স করার উপাদান কম পাবে। ফলে আকাশ দেখাবে অন্ধকার।
এতক্ষণ তো বললাম বায়ুমণ্ডলের কথা। ভূত্বকের কী হবে? আমরা যেই ভূপৃষ্ঠে হেঁটে বেড়াই, গাড়ি চালাই, সাইকেল চালাই তা অক্সিজেন, সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম, লৌহ, ক্যালশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম এই আটটি প্রধান উপাদান দিয়ে গঠিত। আর এই আটটি উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে অক্সিজেন, যার পরিমাণ ৪৫ শতাংশ। তার মানে ভূপৃষ্ঠে অক্সিজেন না থাকলে প্রায় অর্ধেকই থাকবে না। ফলে মাটিতে দেখা দেবে ফাটল। আমরা সব পৃথিবী পৃষ্ঠের ভেতরেই হারিয়ে যেতে থাকব। ভূত্বকের উপরিভাগের নিচেই রয়েছে উত্তপ্ত লাভা। আসলে মানুষের বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না।
ভয় লাগছে? চিন্তা হচ্ছে? বায়ুমণ্ডলের ২১ শতাংশ অক্সিজেন থেকে একটা গভীর শ্বাস গ্রহণ করুন। জেনে রাখুন এমনটা কখনই ঘটবে না।